নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হলো না উত্তরের ১৩ জেলার এমপিদের

নতুন মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়ল উত্তরের ১৩ জেলা।একমাত্র নাটোর থেকে জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়া আর কোনো এমপির ঠাঁই হয়নি। দেশের একটি বড় অংশ থেকে মন্ত্রী না থাকায় এ অঞ্চলের দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ হতাশ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে রাজশাহীতে কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হলো।

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদেও রাজশাহী থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। ২০১৪ সালে রাজশাহীর একজন এমপিকে প্রতিমন্ত্রী করা হলেও জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে তেমন অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বলছেন, দেশের অবহেলিত উত্তরাঞ্চলকে সবসময় বিভিন্নভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হলো না।

জানা গেছে, রাজশাহী থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চারনেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান প্রবাসী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাভ্যন্তরে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালে রাজশাহী থেকে জিয়া সরকারের প্রতিমন্ত্রী হন প্রয়াত এমরান আলী সরকার। এরশাদ সরকারের আমলে রাজশাহীতে সরদার আমজাদ হোসেন দুইদফায় পুর্ণমন্ত্রী ও মেসবাহউদ্দিন বাবলু এবং নুরুন্নবী চাঁদ প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।

১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া সরকারে রাজশাহী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হন ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও প্রতিমন্ত্রী হন প্রয়াত কবির হোসেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে রাজশাহী থেকে অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী করা হয় টেকনোক্র্যাট কোটায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে রাজশাহী থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল কয়েক মাসের জন্য।

২০১৪ ও ২০১৮ সালে রাজশাহী থেকে শাহরিয়ার আলম এরমপি দুই দফায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেন। তবে এবার বাদ পড়েছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে রাজশাহীর ছযটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও কেউ মন্ত্রি পরিষদে ঠাঁই পাননি। দিনাজপুর ও নওগাঁ থেকে একজন করে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। যদিও তারা আগেও মন্ত্রী ছিলেন বিভিন্ন সময়ে। এ ছাড়া নাটোর থেকে একজনকে করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রী।

অন্যদিকে পঞ্চগড় থেকে নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু এবার তিনিও বাদ পড়েছেন। একই সঙ্গে বাদ পড়েছেন গত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী রংপুরের টিপু মুনশিও। এবার বৃহত্তর রংপুর থেকে নির্বাচিত কাউকে মন্ত্রি পরিষদে রাখা হয়নি। যদিও গত সরকারে বৃহত্তর রংপুর থেকে দুজন পূর্ণমন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মন্ত্রিপরিষদে।

বৃহত্তর পাবনা জেলা থেকেও কেউ এবার মন্ত্রিপরিষদে ডাক পাননি। ২০১৪ সালে পাবনার সামশুল হক টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো আমলেই বগুড়া থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে দিনাজপুর-৪ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী পূর্ণমন্ত্রী ও দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রি পরিষদে জায়গা পেয়েছেন। আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০০৮ থেকে ২০১৪ মেয়াদে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অন্যদিকে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সদ্য গত সরকারেও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

এ ছাড়া নাটোর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক এবারও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে থাকছেন মন্ত্রি পরিষদে। ২০০৮ মেয়াদে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ পূর্ণমন্ত্রী থাকলেও এবার পাবনার কেউ মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পাননি। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ জেলা থেকেও কেউ এবার মন্ত্রি পরিষদে ডাক পেলেন না। যদিও ২০০৮ সালে এই জেলা থেকে একজনকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছিল। এবার হতাশা আছে সেখানকার মানুষের মাঝেও।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, বরাবরই অবহেলিত রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চল। সাবেক রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলায় আনুপাতিক হিসাবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়নি অতীতেও। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ কোটি ৯৬ লাখ মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগের কাছাকাছি। অনেকদিন ধরে উন্নয়ন পরিকল্পনাতেও দেশের উত্তরাঞ্চলকে বাদ রাখা হয় বিভিন্ন উপায়ে। এবার রাজশাহী থেকেও কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। ফলে আগামীতে সমতাভিত্তিক ও অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়নের আশাও করা যায় না।

তবে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘গত দুই সরকারের আমলে রাজশাহী থেকে একজন প্রতিমন্ত্রী একটানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করলেও তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরে এক দিনের জন্যও পা রাখেননি। ফলে রাজশাহীর মানুষের কোনো লাভ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার রাজশাহীতে প্রভূত উন্নয়ন করেছেন। আমাদের মেয়র লিটন আছেন। তিনি উন্নয়নের একজন সফল রূপকার। উন্নয়নের চমক দেখিয়েছেন। কাজেই মন্ত্রী না থাকলেও আঞ্চলিক উন্নয়নে কোনো সমস্যা হবে না।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (বিকাল ৪:১০)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com