২৩ জেলায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির নিচে

ঘন কুয়াশার আস্তরণে ঢেকে আছে সারা দেশ। সূর্যের দেখা মিলছে না রাজধানীসহ কোথাও। টানা তিন দিন ঢাকার আকাশ ছেয়ে আছে কুয়াশায়। কমে এসেছে দৃষ্টিসীমা। উত্তরে শিরশিরে ঠাণ্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশার আবর্তে সারা দেশ কাঁপছে কনকনে শীতে। কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। ক্ষতি হচ্ছে রবিশস্যের। কষ্ট বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা ভিড় করছে হাসপাতালে।সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এ সময়টায় যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকা এবং শরীর সব সময় গরম রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি সব সময় গরম খাবার খাওয়া, গরম পানি পান করার কথা বলছেন তাঁরা।

এদিকে দীর্ঘ সূর্যালোকের স্বল্পতায় ভূপৃষ্ঠ তাপহীনতায় প্রতিদিন হ্রাস পাচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য। বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল দেশের ২৩টি জেলায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে। আবহাওয়া বিশ্লেষকেরা বলছেন, আজও বাড়তে পারে হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতা।

কুয়াশায় বিমানের ওঠানামা ও নদীতে ফেরি চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিঘ্নিত হচ্ছে। নৌ ও সড়কে যানবাহন চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। গতকাল রবিবার ঘন কুয়াশায় ঢাকাগামী ১২ ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। আট ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আগামী বুধবার থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে সারা দেশে। বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। কুয়াশাও আবার বিস্তার লাভ করবে।

গতকাল সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে, ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া আরও তিন জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। দেশের প্রায় সবখানে তাপমাত্রা কমলেও রাজধানীতে শনিবারের চেয়ে গতকাল তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। তবে শীতের অনুভূতি কমেনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, তিন কারণে ঠান্ডার অনুভূতি বেড়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে। শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। পার্থক্য মাত্র ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু বেশি। দ্বিতীয় কারণ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাতাসের প্রবাহ বেড়েছে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরে ঘন কুয়াশার আস্তর তৈরি হওয়ায় সূর্যের কিরণ আসছে না; ফলে দিনের তাপমাত্রা বাড়ছে না। তিনি বলেন, রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এমন শীতার্ত আবহাওয়া আরও চার-পাঁচ দিন থাকবে। আগামী বৃহস্পতি-শুক্রবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকায় এখন শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও বৃষ্টির পর শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, ৯টি দেশের ১০টি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলেই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করছে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপরে। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, আজ সোমবার আবহাওয়ার তেমন পরিবর্তন নেই। আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (বিকাল ৪:৩৭)
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com