সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্তৃক প্রকাশিত কিছু সংবাদে বলা হয়েছে পারমাণবিক শক্তির ব্যাটারি বানিয়েছে চীন। চীনা বেটাভোল্ট নামের এক কোম্পানি এই ব্যাটারির উদ্ভাবক। কোম্পানিটির মতে এই ব্যাটারি এক চার্জে চলবে ৫০ বছর। যা রীতিমতো অবাক করার মতো। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম অভি
বেটাভোল্টের বিভি ১০০ নামের পারমাণবিক ব্যাটারি বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে বেটাভোল্ট নামের এক চায়না কোম্পানি। জানা যায়, বেটাভোল্টের এই পারমাণবিক ব্যাটারিটি আকারে পয়সার চেয়েও ছোট। এটি দৈর্ঘ্যে ১৫ মিলিমিটার, চওড়ায় ১৫ মিলিমিটার, পুরুত্বেও ৫ মিলিমিটার। ক্ষুদ্র এই ব্যাটারি মুঠোফোনে ব্যবহার করা যাবে। শুধু মুঠোফোন নয় ব্যবহার করা যাবে ঘড়িসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসেও। বেটাভোল্টের দাবি, একবার চার্জ করে টানা ৫০ বছর পর্যন্ত এই ব্যাটারি মুঠোফোন চালাতে পারবে।
যা দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারি : এতে ব্যবহার করা হয়েছে, নিকেল-৬৩ আইসোটোপ এবং হিরার সেমিকন্ডাক্টর উপাদান। বেটাভোল্টের ব্যাটারিতে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নিকেল-৬৩ আইসোটোপ। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এটি তামায় রূপান্তরিত হয়ে স্থিতিশীল হয়। এতে ব্যবহার করা হয়েছে হিরার সেমিকন্ডাক্টর উপাদান। ফলে এই ব্যাটারি মাইনাস ৬০ থেকে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পরিবেশেও কাজ চালিয়ে যেতে পারে। চীনা প্রতিষ্ঠানটির মতে ইউরোপ-আমেরিকার প্রযুক্তির চেয়েও এই প্রযুক্তি অনেক এডভান্স।
যেভাবে কাজ করে বিভি ১০০ : বিভি ১০০ ব্যাটারিতে দুটি হিরার সেমিকন্ডাক্টর কনভার্টারের মাঝে একটি ২ মাইক্রন পুরু নিকেল-৬৩ পাতলা শিট রাখা হয়। বেটাভোল্টের ‘অনন্য একক-ক্রিস্টাল ডায়মন্ড সেমিকন্ডাক্টর’ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়। এই সেমিকন্ডাক্টর মাত্র ১০ মাইক্রন পুরু।
তবে বিভি ১০০-এর পরবর্তী সংস্করণ ১ ওয়াট শক্তির হবে বলা হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে এটি শক্তিশালী ডিভাইসগুলোর জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। এ কারণে বেটাভোল্ট বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে এমন ডিভাইসের জন্য স্ট্রন্টিয়াম-৯০, প্রমিথিয়াম-১৪৭ এবং ডিউটেরিয়ামের মতো আইসোটোপগুলো যাচাই করে দেখছে। এগুলোর উচ্চ শক্তিস্তর আছে তো বটেই, এগুলোর আয়ুষ্কাল হতে পারে ২৩০ বছর পর্যন্ত।
যেখানে ব্যবহার করা যাবে এই ব্যাটারি : বেটাভোল্ট বলছে, এই পারমাণবিক ব্যাটারি মহাকাশ, এআই ডিভাইস, চিকিৎসা, এমইএমএস সিস্টেম, এআই সেন্সর, ছোট ড্রোন এবং রোবটে ব্যবহারের উপযোগী করে তারা তৈরি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে এই ব্যাটারি চালিত স্মার্টফোন। এ ধরনের স্মার্টফোনে কখনো চার্জ দিতে হবে না।
ঝুঁকিমুক্ত ব্যাটারি : জানা গেছে, বেটাভোল্টের পারমাণবিক শক্তির ব্যাটারি থেকে আগুন লেগে যাওয়ার বা বিস্ফোরণের কোনো শঙ্কা নেই। শুধু তাই নয়, হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাতেও কাজ করতে পারবে ব্যাটারিটি।
আগের পারমাণবিক ব্যাটারিগুলো আকারে বড়, বিপজ্জনক, গরম হয়ে ওঠে এবং ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ, কিছু আগের প্রযুক্তির পারমাণবিক ব্যাটারিতে প্লুটোনিয়ামকে তেজস্ক্রিয় শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সে দিক থেকে বেটাভোল্টের বিভি ১০০ ব্যাটারি অনেক নিরাপদ। এতে শক্ত কিছু খোঁচা দিলে এমনটি গুলি করলেও বিকিরণ বেরিয়ে আসবে না।
বাজারে আসবে কবে : জানা যায় ২০২৫ সাল থেকে এই ব্যাটারি তৈরির কার্যক্রম শুরু হবে।