‘ট্রেন আর ঝড় আসলে ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। কখন জানি ঘর ভেঙে মাথার উপর পড়ে। ২০ বছর আগে স্বামী হারিয়েছি। স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে বিয়ে দেই। জামাইদের বিয়ের সময় কিছু দিতে পারিনি তাই তারা আমার দুই মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করে। আমি এখন নিঃস্ব, ঠিকানাহীন। এ রেললাইনের পাশে সরকারি জায়গায় ছেড়া, কাটা টিনের ঝুপড়ি ঘরটি ছাড়া আর আশ্রয়ের কোনো জায়গা নেই। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বুকফাটা বেদনার কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন আমেনা বেগম (৫০)।
আমেনা বেগম যশোরের শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছী রেললাইনের পাশে জোড়াতালি দেওয়া একটি টিনের ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করেন। এভাবেই এখানে কাটিয়ে দিয়েছেন তিন যুগেরও বেশি সময়। আমেনা বেগমের স্বামী বজলে বিশ্বাস ২০ বছর আগে মারা যান। এরপর অভাবের সংসারের ভার কমাতে দুই মেয়ে পারভীন ও তভেনাকে বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামী হারিয়ে, সন্তান ছাড়া রেললাইনের পাশে একাকী সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি।
আমেনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জটিল রোগে আক্রান্ত। প্রতি মাসে আমার ২ থেকে ৩ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। মেম্বার চেয়ারম্যানের হাতেপায়ে ধরে একটা ভাতার কার্ড পেয়েছি। ভাতার ১৫০০ টাকায় আমার ওষুধই হয় না। আমি অসুস্থ হওয়ায় তেমন উপার্জন করতে পারি না। বেশিরভাগ সময় পাশের মিজান ভাইয়ের ‘খাবার বাড়ি’ থেকে দু-একবেলা খাবার খেয়ে থাকি।
চোখ মুছতে মুছতে আমেনা বেগম বলেন, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছে। আমিও তো নিঃস্ব, ভূমিহীন। আমি তো কোনো ঘর পেলাম না। আমার একটা মাথা গোজার মতো জায়গা প্রয়োজন। এ নড়বড়ে জোড়াতালি দেওয়া ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। যদি কেউ আমাকে একটা ঘর দিতো আর চিকিৎসার জন্য একটু সহযোগিতা করত, তাহলে আমি একটু ভালো জীবনযাপন করে বেঁচে থাকতে পারতাম।
আমেনা বেগমের প্রতিবেশী উদ্ভাবক মিজানুর রহমান বলেন, আমেনা বেগম খুবই নিরীহ মানুষ। স্বামী- সন্তান নেই। তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত। আমি তাকে ওষুধ কেনার জন্য মাঝেমধ্যে সহায়তা করে থাকি। কিন্তু তিনি রেললাইনের পাশের যে জায়গায় থাকেন সেখানে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমার অনুরোধ, এলাকার চেয়ারম্যান, প্রশাসন ও বিত্তশালীরা যেন তার পাশে দাঁড়ায় এবং তাকে একটা মাথা গোজার ঠাঁই করে দেয়।
এ বিষয়ে শার্শা সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমেনাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার সময় তাকে আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি এই এলাকা ছেড়ে যাবেন না বিধায় আবেদন করেনি। এখন আর সুযোগ নেই। তবে আমরা তার খোঁজ খবর রাখছি।
তিনি আরও বলেন, যদি কোন বিত্তশালী মানুষ তাকে আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে তিনি হয়ত ওখানেই একটু শক্ত পোক্ত ঘর বেঁধে থাকতে পারবেন।