স্ট্রোকের লক্ষণ জেনে রাখুন এবং প্রতিরোধ করুন

স্ট্রোক ব্রেইনের রোগ। কিন্তু জনসচেতনতার অভাবে বেশির ভাগ মানুষ স্ট্রোককে হার্টের রোগ মনে করেন। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা পেতে দেরি হয়। মূলত মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলোর জটিলতায় এ রোগ হয়। রক্তনালিতে কখনো রক্ত জমাট বাঁধে। ফলে স্ট্রোক হয়। এতে ব্রেইনের একটি অংশের সক্ষমতা নষ্ট হয়। তার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রক্তনালির কোনো অংশ কোনো কারণে ছিড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে ব্রেইনের একটি অংশ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই স্ট্রোক মারাত্মক রোগ।

যেভাবে বুঝবেন: ‘বি ফাস্ট’ মনে রাখলে আইডেন্টিফাই করতে সহজ হবে। ‘বি’ মানে ব্যালেন্স (ভারসাম্য)। হঠাৎ করে ভারসাম্যহীন হবেন। ‘ই’ মানে আই। হঠাৎ করে ব্লাইন্ডনেস হন কেউ। ‘এফ’ মানে ফেইস। মুখের একটি অংশ অ্যাসিমেট্রি হয় অথবা দুর্বল হয়। ‘এ’ মানে আর্ম। আর্ম (হাত) কখনো দুর্বল হয়ে যায় অথবা পা দুর্বল হয়ে যায়। হঠাৎ করে এসব হয়। এটা স্ট্রোকের লক্ষণ। ‘এস’ মানে স্পিচ। হঠাৎ করে কারোর কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় অথবা স্লারিং অব স্পিচ বা জড়তা হয়। এটিকে বলা হয় স্ট্রোক হয়েছে। ‘টি’ মানে টাইম। টাইম ইজ ভেরি মাচ ইমপর্টেন্ট। এ অবস্থায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

প্রাথমিক করণীয়: স্ট্রোক হলে এক মিনিটে অসংখ্য নিউরন মারা যায়। তাই স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর প্রতিটি সেকেন্ডই মূল্যবান। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ামাত্র হাসপাতালে নিতে হবে। এ ছাড়া অনেক সময় সিভিয়ার ভমিটিং নিয়ে আসে। সিভিয়ার হ্যাডএইক নিয়ে আসে। এসব ক্ষেত্রেও যদি সাডেন অকারেন্স হয়, রোগীকে হসপিটালে নিয়ে যাব। স্ট্রোকের চিকিৎসা আছে। যথাসময়ে চিকিৎসা করলে রোগী ভালোও হয়।

যাদের হয়: সাধারণত বয়স্ক নারী-পুরুষ বিশেষ করে যাদের বয়স চল্লিশোর্ধ্ব, তাদের এ রোগ বেশি হয়। কিন্তু, বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাচ্চাদের স্ট্রোকের পরিমাণ বেশি। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে ১০ শতাংশ শিশু স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রতিরোধ করবেন যেভাবে: সকালে ব্যায়াম করতে হবে, হাঁটাহাঁটি করতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ব্লাড প্রেসার থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডিসথাইমিয়া থাকলে তা কন্ট্রোলে রাখতে হবে। ওবেসিটি থাকলে তা কমিয়ে রাখতে হবে। আমাদের প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে, আমাদের কারও ধূমপানের অভ্যাস থাকলে শতভাগ বন্ধ করতে হবে। অ্যালকোহল বা কোনো অ্যাডিকশন থাকলে, সাবসট্যান্স এবিউজ থাকলে, দ্রুত সেইসব বন্ধ করতে হবে। তরতাজা ফলমূল খেতে হবে। আমাদের পরিমিতভাবে খাবার-দাবার গ্রহণ করতে হবে। আমাদের এনজাইটি, টেনশন, স্ট্রেস- এগুলি কমাতে হবে। যদি কমানো সম্ভব হয়, তবেই স্ট্রোক নামক মারাত্মক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে। ডায়াবেটিসের কারণে বাংলাদেশে স্ট্রোকে আক্রান্তের পরিমাণ বেশি। হাইপারটেনশনের কারণেও মানুষ বেশি স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যদি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করি, অবশ্যই স্ট্রোক নামক গুরুত্বর রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব।

লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল

চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা

০১৮৬৫৪৪৪৩৮৬; ০১৭৭৯৫৯৩৩৭৪

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (বিকাল ৩:৩২)
  • ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com