মোজাম্বিকে ৫০-র বেশি নিরীহের শিরশ্ছেদ করল জঙ্গিরা

না, কোনও অপরাধ ছিল না লোকগুলোর। না ছিল তারা কারও চর, না ছিল কারও সঙ্গে শত্রুতা। কেবল ত্রাসের সঞ্চার করতেই নিরীহ মানুষগুলিকে ধরে ধরে জবাই করে জঙ্গিরা। যে ভাবে আইএসের জঙ্গিরা এতগুলো বছর ধরে করে এসেছে, সে ভাবেই শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের এক-এক কোপে ধড়-মুণ্ড বিচ্ছিন্ন করে, বিকট হাসিতে উল্লাস করেছে ওই জঙ্গির। পঞ্চাশ জনেরও বেশি নিরীহ সেই নরমেধ যজ্ঞের বলি।

ঘটনাস্থল মোজাম্বিক। আরও ভেঙে বললে, উত্তর মোজাম্বিকের কাবো দেলগাদো প্রদেশ। বিগত কয়েক দিন ধরেই এই অঞ্চলে ত্রাসের আবহ কায়েম করেছে ওই জঙ্গিরা। চার পাশে রীতিমতো সন্ত্রস্ত পরিবেশ। যে কায়দায় শিরশ্ছেদ করা হয়েছে, তা মূলত, ইসলামিক টেস্ট ছাড়া কেউ করে না। ফলে, উত্তর মোজাম্বিকের ওই জঙ্গিরাও আইএসের বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে, মোজাম্বিকের ওই জঙ্গিরা সরাসরি ইসলামিক স্টেটের সদস্য না-হলেও তাদের সংগঠনের সঙ্গে আইএসআইএলের সম্পর্ক রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা বিবিসি সূত্রে খবর, গরিবি আর বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত তরুণদের মনে সন্ত্রাসের বীজ বপন করছে জঙ্গিরা। উত্তর মোজাম্বিককে ইসালামিক স্টেটের ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য। তাই ওই অঞ্চলের বেকার-যুবাদের খেপিয়ে দলে ভেড়াচ্ছে জঙ্গিরা। মোজাম্বিকের স্থানীয় মিডিয়াকে কোট করে বিবিসি জানাচ্ছে, বিগত তিন বছর ধরে ঘাঁটি গেড়েছে ওই জঙ্গিরা। সংগঠনকে শক্তপোক্ত করতে নতুন নতুন নিয়োগ করা হচ্ছে।

মোজাম্বিক নিউজ এজেন্সির দাবি, মুখে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে কখনও লোকজনকে গুলি করছে, কখনও আবার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে বন্দুকধারী এই জঙ্গিরা। তবে, সম্প্রতি তাদের বর্বরতা চরম সীমায় পৌঁছয়। স্থানীয় একটি ফুটবল মাঠে লোকজনকে ধরে এনে, কয়েক দিন ধরে গণহারে শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। বিবিসি সূত্রে দাবি, আফ্রিকার দক্ষিণাংশে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে আইএসআইএল জঙ্গিরা। তাই এই ধরনের সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। গত অক্টোবরেই মোজাম্বিকের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দেশের উত্তরে ক্রমাগত জঙ্গি হামলা যাতে তারা ঠেকাতে পারে, মোজাম্বিককে যাবতীয় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকান ওই দেশটির ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

জানা গিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকেই কাবো দেলগাদো প্রদেশে ইসলামের নামধারী বিদ্রোহীরা হামলা শুরু করেছে। এ বছর ওই প্রদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়ে মোজাম্বিকের সেনাকে টার্গেট করা হয় ওই বিদ্রোহীরা। এর পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা চেয়ে আর্জি জানায় মোজাম্বিক সরকার। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে আর্জি জানিয়েছে মোজাম্বিক সরকার।

গত এপ্রিলেও পঞ্চাশের বেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করে পরে ধড়-মুণ্ড বিচ্ছিন্ন করা হয়। সন্ত্রাসবাদী দলে ভিড়তে নারাজ হওয়ার কারণেই এই শিরশ্ছেদ। মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ, বিদ্রোহ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীও সেখানে এখন পালটা অভিযানে নেমেছে। যার জেরে সেনার তরফেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বুধবার (রাত ১:৩৫)
  • ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com