সফলদের ব্যর্থতার গল্প

ব্যর্থতাই নাকি সফলতার চাবিকাঠি। শতভাগ সত্য এই মতবাদের নিদর্শনও রয়েছে অসংখ্য। পৃথিবীর সফল কোনো মানুষই একদিনে সফলতার ছোঁয়া পাননি। লক্ষ্যে অটুট থেকে সেই পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের টপকাতে হয়েছে ব্যর্থতার বহু সোপান। তাদের সফলতার সেই গৌরবোজ্জ্বল গল্পের পেছনে লুকিয়ে আছে শত ব্যর্থতার গল্প। এসব ব্যর্থতার গল্প থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। কারণ প্রতিটি গল্পেই যে আছে অনুপ্রেরণা। তারা যতবার ভুল করেছেন, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই নতুন উদ্যমে শুরু করেছেন এবং একসময় তারা বদলে দিয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাস। সেই সফলদের ব্যর্থতার গল্পগুলো নিয়ে এবারের আয়োজন।

আব্রাহাম লিংকন

আব্রাহাম লিংকন জন্মগ্রহণ করেন ১৮০৯ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। রাজনীতি ও খ্যাতির দিক থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে সফলতম মানুষদের একজন তিনি। কিন্তু তার এই সফল জীবনের শুরুটা ছিল ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি চাকরিচ্যুত হন। দেশটির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্টদের কাতারে থাকা এই মানুষটি একাধিক নির্বাচন, যেমন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য পদ, ওয়াশিংটনের জেনারেল ল্যান্ড অফিসের কমিশনার পদ, সিনেটর পদের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। এত ব্যর্থতার পর অবশেষে ১৮৬১ সালে ৫২ বছর বয়সে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

বিল গেটস

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় শীর্ষে থাকা বিল গেটসকে চিনবেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তার কোম্পানির তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেমেই এখন চলছে বিশ্বের বেশিরভাগ কম্পিউটার। সেই বিল গেটসের ব্যর্থতার গল্প হয়তো অনেকেরই অজানা। মাইক্রোসফটের কো-ফাউন্ডার এবং বাল্যবন্ধু পল এ্যালেন আর বিল গেটস মিলে ‘ট্রাফ-ও-ডাটা’ নামে একটি মেশিন তৈরি করেছিলেন যেটি ট্রাফিক কাউন্টার থেকে ডাটা সংগ্রহ করে গুছিয়ে নিয়ে সরকারি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারদের সরবরাহ করবে। এমন একটি যন্ত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শিয়াটলের ট্রাফিক সুপারভাইজার। কিন্তু তখন যন্ত্রটি কোনোভাবেই চালু করা সম্ভব হয়নি। সেই ব্যর্থতা থেকেই আজ সফল তিনি।

কনোনেল স্যান্ডার্স

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ফাস্টফুড চেইন—কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কনোনেল স্যান্ডার্স। বিশ্বব্যাপী এই ফুড চেইনের শাখা রয়েছে অগণিত। ভিন্ন স্বাদ নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কনোনেল স্যান্ডার্সের এই রেসিপি খুঁজে পেতে চেষ্টা করতে হয়েছে ১০১০ বার। শেষবার এসে সফল হয়েছেন তিনি। মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। রান্নায় দক্ষতার কারণে কাজ পেতে সময় না লাগলেও যখনই ব্যতিক্রম কিছু করতে চেয়েছেন, হোঁচট খেয়েছেন ঠিক তখনই। ১৯৩৯ সালে ৪৯ বছর বয়সে অনেক কষ্টে শুরু করা মোটেল ৪ মাস চলার পরই আগুন ধরে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৫৫ সালে ব্যর্থ হয় তার আরেকটি উদ্যোগ। এরপর চেষ্টা করেন নিজের হাতের সেই বিখ্যাত সিক্রেট রেসিপি বিক্রির জন্য। এক হাজার ৯টি রেস্টুরেন্ট ঘুরে অবশেষে এক রেস্টুরেন্ট তার রেসিপি নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়!

আলবার্ট আইনস্টাইন

মানবজাতির ইতিহাসকে বদলে দেওয়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। এমনকি ইতিহাসের সেরা মেধাবী বিজ্ঞানীও বলা হয় তাকে। ১৮৭৯ সালে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানীকে প্রথম জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে হয়েছে। শিশু বয়সেই কথা বলা শিখতে বেশ সময় লেগেছিল তার। পড়াশোনায়ও ছিলেন কাঁচা। তরুণ বয়সে জুরিখের সুইস ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে; এই অপারগতা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও তার সঙ্গী ছিল। পরে বাধ্য হয়ে ইন্সুরেন্স সেলসম্যানের কাজ নেন। এরও প্রায় দুই বছর পর তিনি পেটেন্ট অফিসে কাজ পান। একসময় সেই ব্যর্থ মানুষটিই বদলে দিয়েছেন মানবজাতির ইতিহাস। বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য জিতেছেন নোবেল।

জ্যাক মা

অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘আলিবাবা’-কে আর নতুন করে চেনানোর প্রয়োজন নেই। এর মাধ্যমেই বিশ্বের সবচেয়ে সফলতম ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন সাইটটির প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। চীনের ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ী কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় তিনবার ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেন। চতুর্থবারের চেষ্টায় তিনি কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। এরপর চাকরির পরীক্ষায়ও ব্যর্থ হন বেশ কয়েকবার। এমনকি পরীক্ষার্থীদের সবাই পাশ করলেও টানা ফেল করেছেন তিনি একাই। এরকম বহুবার ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বের অন্যতম সফল, বিখ্যাত ও বৃহত্তম অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘আলিবাবা’।

টমাস আলভা এডিসন

বৈদ্যুতিক বাতি, চলচ্চিত্র, অডিও রেকর্ডিং, টেলিগ্রাফ, আধুনিক ব্যাটারিসহ সহস্রাধিক আবিষ্কারের নেপথ্যে যিনি ছিলেন, তিনি হলেন টমাস আলভা এডিসন। ১৮৪৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানীর শ্রবণশক্তি ছিল শূন্যের কোঠায়। পড়াশোনায় তিনি এতটাই খারাপ ছিলেন যে, স্কুল থেকে তাকে বের করে দেওয়ার চিঠিতে লেখা ছিল—‘টমাস পড়াশোনায় খুবই অমনোযোগী এবং তার মেধাও ভালো নয়; এই ধরনের দুর্বল ছাত্রকে স্কুলে রাখা যাবে না।’ কিন্তু টমাসের মা চিঠি খুলে ছেলেকে শুনিয়ে পড়েছিলেন—‘টমাসের মেধা সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে অনেক বেশি, এত বেশি মেধাবী ছাত্রকে পড়ানোর ক্ষমতা সাধারণ স্কুলের নেই।’ সেই থেকে টমাস জটিল জটিল সব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের সময় ১০ হাজারবার তার পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু তিনি তবুও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবং সফল হয়েছেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (ভোর ৫:০৭)
  • ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com