নান্দাইলে তরুণকে কুপিয়ে হত্যার জেরে বাড়ি ভাঙচুর–লুটপাট

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মারা যাওয়ার আগে ওই তরুণ যাঁরা তাঁকে কুপিয়েছেন, তাঁদের নাম বলে গেছেন। তাঁর ওই মুহূর্তের ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার পর স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন। নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের উত্তরবন্দ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণের নাম রানা মিয়া (২২)। তিনি নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের বনাটি গাংগাইলপাড়া গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে। তাঁকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা, ছুরি, টেঁটাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে নান্দাইল সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে বনাটি গাংগাইলপাড়া গ্রামে নিহত রানা মিয়ার বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় দেখা যায়। সেখানে রানার মা সেলিনা আক্তার, বোন চাম্পা আক্তার, চাচি সুফিয়া খাতুনসহ অন্য স্বজনেরা আহাজারি করছিলেন।
রানা মিয়ার চাচি সুফিয়া খাতুন জানান, গতকাল রোববার রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির পেছনে পুকুরের পাড়ে যান। সেখান থেকে ১০ থেকে ১২ জন রানার মুখে গামছা পেঁচিয়ে উত্তরবন্দ এলাকার ফসলি জমিতে নিয়ে যান। রানা ঘরে ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজন তাঁর মুঠোফোনে ফোন দিয়ে সেটি বন্ধ পান। পরে এক স্বজনের মুঠোফোনে রানাকে কোপানোর খবর আসে। পরে পরিবারের লোকজন দ্রুত উত্তরবন্দ এলাকার ফসলি জমিতে গিয়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে রানাকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। আহত রানাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে গ্রামের ভেতরে নিয়ে আসেন এলাকাবাসী। তখনো রানা বেঁচে ছিলেন। এ সময় স্বজন ও গ্রামের লোকজনের উপস্থিতিতে রানা কারা তাঁকে কুপিয়েছেন এক এক করে তাঁদের নাম বলেন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় রানার বলে যাওয়ার কথার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে দিলে গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে রানাকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই তিনি মারা যান। মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছানোর পর উত্তেজিত লোকজন রানা তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত যাঁদের নাম বলেছিলেন, তাঁদের খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রতিবেশী বকুল মিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয়। খবর পেয়ে নান্দাইল থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ি থেকে বকুল মিয়া (৫২), তাঁর ভাই বুলু মিয়া (৪৫) ও বকুল মিয়ার ছেলে হামিমকে (২২) গ্রেপ্তার করে। ওই বাড়ি থেকে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

বনাটি গাংগাইলপাড়া গ্রামের ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ১৫টির মতো বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। অনেক বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙা, টিনের বেড়ায় কোপানোর দাগ, ঘরের আসবাব ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে।

বনাটি গাংগাইলপাড়া গ্রামের প্রায় ১৫ জন বাসিন্দা জানান, বনাটি গাংগাইপাড়া গ্রামের মানুষ রাজন মিয়া ও সোলেমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দুটি ভাগে বিভক্ত। এই দুই পক্ষের মধ্যে চার বছর আগে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিল। পরে স্থানীয় কাশীনগর স্কুল মাঠে বড় ধরনের সালিস আয়োজন করে দুই পক্ষের ওই বিরোধ মীমাংসা করা হয়। এর পর থেকে উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু রানাকে নৃশংসভাবে হত্যা ও বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর আবারও দুই পক্ষের বিরোধ সহিংসতার রূপ নিয়েছে।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল মজিদ মুঠোফোনে জানান, রানার মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর আজ সকালে কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তারপর গ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। এ ঘটনায় আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ আইনি কার্যক্রম শুরু করেছে। রানা মিয়াকে হত্যার কারণ সম্পর্কে এখনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

 

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (ভোর ৫:০০)
  • ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com