চীন–রাশিয়াকে রুখতে কৌশলী ন্যাটো নেতারা

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে জোটের নেতারা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জড়ো হয়েছেন। সোমবারের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ন্যাটো দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক মিত্রতা আরও জোরদার হবে; একই সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ জোটের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা জানানো হবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত থেকে ইউরোপের দেশগুলোকে নিরাপত্তা দিতে ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ন্যাটোর যাত্রা শুরু হয়। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোর বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা কমানোর পক্ষে ছিলেন। এটা নিয়ে ৩০ দেশের এই সামরিক জোটের সঙ্গে ওয়াশিংটনের ঐতিহাসিক মিত্রতায় দূরত্ব তৈরি হয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এখন এই দূরত্ব কমানোর বার্তা নিয়ে ব্রাসেলসে গেছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ট্রাম্পের ওই নীতি থেকে সরে এসেছেন। ন্যাটোর এবারের সম্মেলনে সদস্যদেশগুলোর পারস্পরিক আস্থা ফেরানোর প্রক্রিয়া অন্যতম একক হবে। কেননা, বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার পর এটাই এই সামরিক জোটের প্রথম সম্মেলন। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, এটাই ন্যাটোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হবে।

এর পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেনসহ ন্যাটো নেতাদের মুখ থেকে কড়া বার্তা শোনা যেতে পারে। চীনকে ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বিবেচনা করে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ বিবৃতি দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ইতিমধ্যে ন্যাটোর মহাসচিব বলেছেন, ‘আমরা নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধে জড়াচ্ছি না। তবে চীনের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ভাবতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘চীন আমাদের মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। তাই চীনের বিরুদ্ধে আমাদের জোটগতভাবে দাঁড়াতে হবে। ’

যুক্তরাজ্যে ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সদ্য সমাপ্ত শীর্ষ সম্মেলনেও নিরাপত্তা হুমকি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চীনের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তবে যুক্তরাজ্যের চীনা দূতাবাস এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন গুজব’ বলে অস্বীকার করেছে।

এদিকে সম্মেলন শুরুর আগে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি জানি আগামী কয়েক দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কিছু কড়া বার্তা দিতে পারেন। ’ ন্যাটোর সম্মেলনের পর মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাইডেন-পুতিনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউরোপীয় সীমানায় ইউক্রেন, ক্রিমিয়ায় রুশ সেনাদের উপস্থিতি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইবার হামলায় রুশ-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ, এমন নানা বিষয়ে রাশিয়ার প্রতি ন্যাটোর অবিশ্বাস বেড়েছে। জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এখন সবচেয়ে তলানিতে রয়েছে।

থিঙ্কট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক কারিন ভন হিপেল গার্ডিয়ানকে বলেন, চীন ও রাশিয়ার মতো সমস্যাকে মোকাবিলায় ন্যাটো জোটের গুরুত্ব বাইডেন ভালোমতো জানেন। তিনি এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবেন।

ব্রাসেলসে যাওয়ার আগে বাইডেনও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার সক্ষমতায় ন্যাটো জোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং আমি তাদের (ন্যাটোর সদস্যদেশ) এ-বিষয়ক বাধ্যবাধকতার কথা জানাতে চাই। ’

এদিকে জোট সদস্যদের পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক উন্নয়ন, চীন-রাশিয়ার বিরোধিতার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সেনাদের প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা জোটের এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (রাত ১০:৩৩)
  • ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com