মন কাড়ছে ‘বুড়োর বিলের’ পদ্ম

রাজবাড়ীর ‘বুড়োর বিলের’ টলমলে পানিতে সবুজ পাতার ফাঁক গলে ফুটে আছে শত শত গোলাপি পদ্ম; ফোটার অপেক্ষায় আছে আরও অসংখ্য। শিশু-কিশোররা দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে পদ্মবিলে। কেউ কেউ তুলে নিচ্ছে দুই একটা পদ্ম।

বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়িয়া এলাকায় বুড়োর বিলের এমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

স্থানীয়রা জানান, তাদের কাছে এটি ‘বুড়োর বিল’ নামেই পরিচিত। গত তিন দশক ধরে বর্ষাকালে এ বিলে গোলাপি রঙের অসংখ্য পদ্ম ফোটে। এমনিতে পদ্ম ফুল সারা বছর থাকে না। বর্ষা কালেই শুধু দেখা যায়। তবে গত দুই বছর ধরে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এটি ‘মাঠবাড়িয়ার পদ্মবিল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মবিলের তিন পাশে পাট ক্ষেতের মাঝে পদ্মের সমারহ। যত দূর চোখ যায়-শুধু গোলাপি রঙের আভা। দিনের আলোর ছটায় এ রঙ যেন আরও ঝলমলে হয়ে ওঠে। পদ্মের এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এলাকাবাসীর পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসছেন বিলে।

তবে বিলে নৌকার ব্যবস্থা না থাকায় যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে কয়েকজন দর্শনার্থী জানান।

রাজবাড়ী জজ কোটের আইনজীবী অভিজিৎ সোম বলেন, “বিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি; খুবই ভালো লাগছে। তবে এই বিলে প্রবেশের জন্য নৌকার ব্যবস্থা নেই। নৌকা থাকলে দর্শনার্থীরা ফুলের কাছে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতো।

“পাশাপাশি স্থানীয়রাও নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারতো। এখন লোকজন হেঁটেই বিলে গিয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখে ফিরে আসছে।”

পদ্মফুল ফোটার সময়ে বিলটা সংরক্ষক করা গেলে দর্শনার্থীরা আরও বেশি উপভোগ করতে পারতেন বলে মনে করেন এ আইনজীবী।

হান্নান শেখের বাড়ি পাবনা জেলায়। তিনি রাজবাড়ীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। গত কয়েক বছর আগে এই বিলে পদ্ম ফুল দেখার পর থেকে তিনি প্রতিবছর বর্ষার সময় বুড়োর বিলে আসার জন্য চেষ্টা করেন।

হান্নান বলেন, “বুড়োর বিলে পদ্ম ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে গত বছর আসতে পারি নাই। এবার এক সঙ্গে শত শত ফুল দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।  তবে বিলে নৌকার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো লাগতো।”

মাঠবাড়িয়া এলাকার গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, “আমি জন্মের পর থেকেই এই বিলে পদ্ম ফুটতে দেখছি। এটাকে অনেতে বুড়োর বিল বলে, আমরা বলি পদ্ম বিল। এখানে প্রকৃতিপ্রেমী অনেক লোকজন বেড়াতে আসে, ছবি তোলে।”

অনেকে আবার পদ্ম ফুল ছিড়ে নষ্ট করে ফেলে জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন একই এলাকার নায়েব আলী। তিনি বলেন, “পদ্মফুলের কাছে যাওয়া মাত্রই স্থানীয়রা ফুল না ছেঁড়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু যখন কেউ থাকে না, তখন দর্শনার্থীদের অনেকে যে যার মত ফুল ছিড়ে নষ্ট করে ফেলে। এ বিষয়টা খুবই খারাপ লাগে।”

রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুল্লাহীল হাসান  বলেন, “পদ্ম একটি জলজ উদ্ভিদ। ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত তিন ধরনের পদ্ম ফুল দেখতে পাই- লাল পদ্ম, শ্বেত পদ্ম ও নীল পদ্ম। নীল পদ্ম যদিও দেখা যায় না বললেই চলে। সাধারণত নীল পদ্ম আমরা গল্প উপন্যাসে পেয়ে থাকি।

“একটা সময় আমাদের দেশে অনেক পদ্ম দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমান সময় বিল জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণে পদ্ম ফুল বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। পদ্মফুলের অনেক ওষুধীগুণও রয়েছে।”

পদ্মবিলটি সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে  বালিয়াকান্দি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, এখনও তেমন কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি, তবে বিবেচনাধীন আছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (রাত ১০:১৪)
  • ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com