মৌসুমের শীতলতম দিনে ১৩ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ

মৌসুমের শীতলতম দিনে ১৩ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ

  • আজ বাড়তে পারে শীত
  • ঢাকায় তাপমাত্রা গড়ে ৬ ডিগ্রি
  • বুধবার থেকে সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা

প্রতিদিন নামছে তাপমাত্রা। বাড়ছে হাঁড় কাঁপানো শীতের তীব্রতা। গতকাল ছিলো মৌসুমের শীতলতম দিন। মৃদু শৈত্য প্রবাহ ১৩ টি জেলায় বিস্তৃত হলেও গোটা দেশজুড়েই হিমেল হাওয়া আর ভারি কুয়াশায় কনকনে শীত জেঁকে বসেছে। আগামীকাল পৌষ শেষ হতে যাচ্ছে অতি মাত্রার শীতের দাপটের মধ্যেই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি গতকাল। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে গত চারদিন সূর্য অদৃশ্য। কোথাও সূর্যের আলো বিকিরন করতে না করতেই ঢেকে যাচ্ছে ভারি কুয়াশার চাদরে। সূর্যালোকের স্বল্পতায় ভূপৃষ্ঠ তাপহীন শীতল হয়ে পড়েছে। এতে হ্রাস পেয়েছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য। বেড়েছে বাতাসে আর্দ্রতা। ফলে শীতের অনুভূতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে কুয়াশার কারণে সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গেছে। রাজধানী ঢাকায় কমেছে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও কয়েকদিন এই ঠাণ্ডার প্রকোপ চলবে। আজ বাড়তে পারে প্রচণ্ড শীতের পরিধি। কুয়াশা,ঠাণ্ডা শিরশিরে হাওয়া আর হাঁড় কাপানো শীতের প্রকোপে দেশের উত্তরাঞ্চল,পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলসহ গোটা দেশের জনজীবন চরম দুর্ভোগে পতিত হয়েছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছে জনপদবাসী। বেড়েছে শীতজনিত রোগও। শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগ-বালাই বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। কুয়াশায় বিমানের ওঠা-নামা ও নদীতে ফেরী চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিঘ্নিত হচ্ছে। নৌ ও সড়কে যানবাহন চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।

আগামীকাল সোমবারের পর ভারি কুয়াশা ক্রমে সরে যাবে। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আগামী বুধবার থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঝারী বৃষ্টিপাত হতে পারে সারাদেশে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে আরেক দফা শৈত্য প্রবাহের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। কুয়াশারও আবারো বিস্তার লাভ করবে। গতকাল সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া জেলাগুলো হচ্ছে- রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া। এসব জেলায় এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঢাকায় গতকাল তাপমাত্রা পূর্বদিনের চেয়ে কমে যায়। শুক্রবার ছিল ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি, গতকাল তা নামে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। পার্থক্য যদি ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। শুক্রবার বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে, রংপুর, দিনাজপুর, তেতুলিয়ার মতো উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। এছাড়া ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলেও তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। এ ছাড়া সিলেটে ৪ ডিগ্রির নিচে, রাজশাহীতে ৮ ডিগ্রির নিচে, রংপুরে ৬ ডিগ্রির নিচে, ময়মনসিংহে ৪ ডিগ্রির নিচে, খুলনা ও বরিশালে ৮ ডিগ্রির নিচে এবং চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। শীতের অনুভূতি বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি। বেশিরভাগ জেলাতেই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াতে শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তিনি বলেন,সূর্যের কিরণকাল থাকে কম। সূর্য ওঠার দুই ঘণ্টা পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার দুই ঘণ্টা পূর্বাব্দী সময়কে বলা হয় কিরণকাল। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা’। ফলে ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় মাটি শীতল থাকে এবং তীব্র শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়াবিদগণ বলছেন, বর্তমানে পশ্চিমা বাতাসের গতিবেগও বেড়ে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে । বিরাজ করছে দুপুর পর্যন্ত, কোথায় কোথাও দিনভর ঘন কুয়াশা। তারপরও নেই সূর্যের উজ্জ্বল কিরণ। বিশেষ করে কনকনে পশ্চিমা বাতাসে যেন মাঘের শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, আগামী দু’দিনে আবহাওয়ার তেমন পরিবর্তন নেই। আগামীকাল সোমবার দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, তবে পরদিনই ফের কমার আভাস রয়েছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, আগামী ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে কুয়াশা কেটে গেলেও সে সময় শীত আরও বাড়তে পারে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, দেশব্যাপী চলমান কুয়াশার বিস্তার থাকবে সোম-মঙ্গলবার পর্যন্ত। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রায় ১২ ঘণ্টা এগিয়ে এসেছে। বৃষ্টির পরই সারাদেশে ভারী কুয়াশার বিস্তার লাভ করবে। এ জন্য ১৫ জানুয়ারির পর আলু চাষিদের কৃত্রিম সেচ না দেওয়া ভালো। এতে বৃষ্টির পানি ক্ষেতে জমে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। সম্ভাব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫ থেকে ৭৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাতের মূল অংশ অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো ও চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তর দিকের জেলাগুলোর উপর দিয়ে। সম্ভাবনা বেশি ১৭ জানুয়ারি মধ্যরাতের পর থেকে ১৮ জানুয়ারি বেলা ৩ টার মধ্যে মূল বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের উপর দিয়ে অতিক্রমের।

এদিকে দিনাজপুর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, নীলফামারী, সৈয়দপুর,গোপালগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, রংপুর,পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা,কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতারা জানান, তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের আয় কমেছে। ওদিকে হাসপাতালে শিশু ও প্রবীণ রোগীর ভিড় বাড়ছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শনিবার (বিকাল ৫:৩৮)
  • ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com