রাজশাহী অঞ্চলে ৫২ দিনে পানিতে ডুবে ২৫ জনের মৃত্যু

রাজশাহীতে ৫২ দিনে নদী ও পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। এরমধ্যে শিশুই ২০ জন। তবে নদীর তুলনায় পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যুহার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। সন্তানদের শিশু অবস্থায় সাঁতার শেখানোর বিকল্প নেই।

জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগে পানিতে ডুবে মৃতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজশাহী জেলায়। এ জেলায় পুকুর ও নদীতে ডুবে ৮ জন শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাতজনের চারজন শিশু, জয়পুরহাট জেলায় এক শিশু, বগুড়ায় দুই শিশু, সিরাজগঞ্জে দুই শিশু, পাবনায় দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুলাই নগরীর সাতবাড়িয়া এলাকায় পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে চর সাতবাড়িয়া এলাকার সুখচানের ছেলে সিয়াম (১১) ও একই এলাকার লেবাসের ছেলে সাজিদ (১২), ১৫ জুলাই পবার বড়গাছি কুঠিপাড়ায় বারনই নদীতে পড়ে রিয়ার (৬), ১৪ জুলাই দুর্গাপুর উপজেলা চত্বরে পুকুরে ডুবে ফুফু ও ভাতিজি মেঘা খাতুন (৮) ও হিরা খাতুন (২৪), ১৭ জুন বাগমারা শুভডাঙ্গার বাড়িগ্রাম ও ধামিন কামনগর গ্রামে পানিতে ডুবে সাকিবুল ইসলাম (৪) ও সামিউল ইসলাম (৬), গত ১১ জুন নগরীর শ্রীরাপুরে পদ্মা নদীতে গোলাম সারোয়ার সায়েম (১৭) ও রিফাত খন্দকার গালিব (১৭) এবং গত ৩০ মে হেতমখাঁয় পুকুরের পানিতে ডুবে নির্ঝর (৯) ও অনন্তের (৭) মৃত্যু হয়েছে।

অপরদিকে, ২১ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে রেশমা খাতুন (৭) ও মোসলেমা খাতুন (১৪), ২০ জুলাই মহানন্দায় রিফাত আলী (১৪), ২৭ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে নৌকাডুবিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে এনামুল হকের (৬০) মরদেহ পাওয়া গেছে।

নিখোঁজরা হলেন, একই গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে নেজাম উদ্দিন (৫৭), মৃত সোহরাবের ছেলে আব্দুর রহমান (৫২) ও চর দেবীনগর এলাকার সুমন আলীর ছেলে পাখি (১৩)। তারআগে ১১জুন নদীতে গোসলে নেমে ইয়াসিন আলীর (৯) মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ৪ জুন জয়পুরহাট সদরের দিঘিতে ডুবে সোহানের মৃত্যু হয়।

এদিকে, ১৫ জুলাই বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় নদীতে ডুবে আরিয়ান হোসেন (৫), ৩১ মে ধুনটে মানাস নদীতে ডুবে তানভীর হাসান (২) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৩ জুলাই সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পানিতে ডুবে আবু সিয়াম (৭) ও আবু হুরায়রা (৮), তাড়াশ উপজেলায় মাছ ধরার সময় পুকুরে ডুবে সঞ্জয়ের (৯) মৃত্যু হয়েছে। গত ১৪ জুলাই পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মার শাখা নদীতে গোসলে রাব্বি ফকির (২৫), ৮ জুলাই ঈশ্বরদীতে পুকুর থেকে লামিয়া খাতুনের (৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ৪ জুলাই ঈশ্বরদীতে খাদের পানিতে ডুবে তাইয়েবার (৪) মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী সদর ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি লিডার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বেশির ভাগ শিশু মা-বাবার অনুপস্থিতিতে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়। দেখা যায় অভিভাবকের অগোচরে কোথাও গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অভিভাবকদের সন্তানের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। সন্তানকে সাত থেকে আট বছর বয়সে সাঁতার শেখাতে হবে। পানিতে ডুবে মৃত্যুর মূল কারণ সাঁতার না জানা। পানিতে জীবন রক্ষায় সাঁতারের বিকল্প নেই। শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপশি সাঁতার শিখতে হবে।

রাজশাহী সদর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, রাজশাহীতে যেসব শিশু ও কিশোর পানিতে ডুবে মারা যাওয়া বেশির ভাগ সাঁতার জানে না। প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুই সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যায়।

বাংলাদেশ জাতীয় সাঁতার দলের সাবেক কোচ আলমগীর হোসেন বলেন, সাঁতার না জানার কারণে দেশে প্রতি বছরই বহু মানুষ মারা যায়। শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের সাঁতারও শেখাতে হবে। কোনো শিশু ডুবে মারা গেলে তার শিক্ষার কোনো দাম থাকবে না। জীবন বাঁচাতে তাই সাঁতার শেখাতে হবে। মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বৃহস্পতিবার (রাত ৯:২০)
  • ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
  • ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com