বগুড়ায় পুলিশের নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে আস্থা বাড়ছে মানুষের

বগুড়ায় নারী নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে গেলেও পুলিশের নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের কার্যক্রমের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে। বগুড়া সদর থানাসহ জেলার ১২ থানাতে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর এ সেবার পরিধি বাড়ছে। এতে হাজার হাজার অসহায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে। গত ২ বছরে প্রায় ১৩ হাজার ৪১২ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

নারী ও শিশু ডেস্কের কর্মকর্তারা জানান, হেল্প ডেস্কে ৮০ শতাংশের বেশি অভিযোগ আসছে পারিবারিক বিষয় নিয়ে। স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, নির্যাতন ও যৌতুকের বিষয়ে অভিযোগ আসছে বেশি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং পরকীয়া নিয়েও স্বামীদের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ করছেন গৃহবধূরা। এসব কারণে ভেঙে যাচ্ছে সংসার। নারী হেল্প ডেস্কের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অভিযোগকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাম-পরিচয় এবং অভিযোগের বিষয়টি গোপন রেখে তাকে আইনি সহযোগিতা করা হয়।

পুলিশের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে বগুড়া জেলার ১২ থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে ৫ হাজার ৭৪৯ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালে এ সেবা দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৩ জনকে। এছাড়া ২০২০ সালে সেবা পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১৩ জন।

গৃহবধূ আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, তার মেয়েকে নির্যাতন করায় জামাতার বিরুদ্ধে থানায় হেল্প ডেস্কের সহায়তায় অভিযোগ করেন। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশের তৎপরতায় জামাতা ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান। পরে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।

বগুড়া শহরের বাঁশবাড়িয়া এলাকার রিমা বেগম তার বোন নিখোঁজের অভিযোগ দিতে এসেছিলেন বগুড়া সদর থানায়। অভিযোগ কীভাবে লিখতে হবে, তা জানা ছিল না রিমার। থানায় পৌঁছানোর পর একজন নারী পুলিশ তাকে হেল্প ডেস্কে ডেকে নেন। সমস্যা শোনার পর অভিযোগ লিখে দেন। তিন দিনের মধ্যে তার বোনকে উদ্ধার করে পুলিশ।

শুধু রিমা বেগম ও আঞ্জুয়ারা নন, বগুড়ার ১২ থানায় স্থাপিত নারী ও শিশু সহায়তা হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে মিলছে নানা পুলিশি সেবা। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে এবং আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে বগুড়ার ১২ থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের নারী কর্মকর্তা এসআই জেবুন নেছা বলেন, তার ডেস্কে পারিবারিক বিষয় নিয়েই বেশি অভিযোগ আসে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে এ ধরণের অধিকাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এতে বহু সংসার ভাঙনের হাত রক্ষা পাচ্ছে। তবে ধর্ষণসহ গুরুতর অভিযোগগুলোর বিষয়ে থানায় মামলা করে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে। নারী ও শিশু সহায়তা ডেস্ক স্থাপিত হওয়ায় থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে হয়রানি কমেছে। গুরুতর অভিযোগ ছাড়া বেশিরভাগ পারিবারিক বিরোধ মামলা ছাড়াই সন্তোষজনক নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, জেলার ১২টি থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে। হেল্প-ডেস্কে একজন এসআই, একজন এএসআই ও তিনজন নারী কনস্টেবল দায়িত্বপালন করছেন। শুধু বগুড়া নয়, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি থানায় স্থাপন করা হয়েছে নারী, শিশু, বয়স্ক হেল্প ডেস্ক। সেবা গ্রহীতারা সেবা পেয়ে খুশি। ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ করা হয়েছে।

২০১৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম বগুড়া সদর, সোনাতলা ও নন্দীগ্রাম থানায় এ ডেস্ক স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি থানায় এ ডেস্ক স্থাপন করে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। নারী ও শিশুদের কোনো অভিযোগ নিয়ে থানায় এলে তাদের হেল্প ডেস্কে পাঠানো হয়। এরপর ডেস্কে নিয়োজিত নারী পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। যদি অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করতে

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • সোমবার (সকাল ৭:১৬)
  • ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com