ছাত্রদলের সংহতিকে প্রত্যাখ্যান করলেন বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ছাত্রদলের সংহতি প্রকাশকে প্রত্যাখান করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ছাত্রদলের সংহতিকে ‘রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট’ বলে মনে করছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। তাই ছাত্ররাজনীতি করতে চায়, এমন যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধেই তাঁদের অবস্থান সমান।

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বুয়েটের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। এর আগে আজ দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।
এমন প্রেক্ষাপটে সন্ধ্যায় বুয়েট শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। এতে তিনজন শিক্ষার্থী লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, ‘আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি। তাদের এই রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সংহতিকে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করছি।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘২০২০ সালের জুলাইয়ে বুয়েটের বিধিমালা লঙ্ঘন করে ছাত্রদল যখন বুয়েটে তাদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে, তখনো আমাদের তৎকালীন অগ্রজ ব্যাচ তাদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে এবং উপাচার্য ও ডিএসডব্লিউ স্যার বরাবর তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন করে।’

বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হিযবুত তাহরীরের মতো নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এমন নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে সব দল ও মতের লেজুড়বৃত্তিক সাংগঠনিক রাজনীতি ও মৌলবাদী দলগুলোর বিপক্ষে আছি এবং থাকব। তাই আমাদের বর্তমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যেকোনো সম্ভাব্য প্রচেষ্টাকে আমরা ধিক্কার জানাই।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘গত দুই দিনব্যাপী জনমত নিরীক্ষণের জন্য আমরা নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করি। ৫ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। সুতরাং আমাদের অবস্থানের যথাযথতা এখানে প্রমাণিত।’

গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতের পর ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান, এমনটি উল্লেখ করে ২৯ মার্চ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২৭ মার্চ মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের ‘সংগঠক’ শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটের হল থেকে তাঁর সিট (আসন) বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অন্যদিকে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবিতে ৩১ মার্চ দুপুরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি একটি কালো আইন। এই আইন সংবিধানবিরোধী।

৩১ মার্চ সমাবেশের পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে যান। তাঁরা বুয়েট শহীদ মিনারের পাশে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে (প্রতিকৃতি) ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর কিছু সময় পর তাঁরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গত সোমবার হাইকোর্টে বুয়েটের ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র বৈধতা নিয়ে রিট করা হয়। রিটে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • মঙ্গলবার (রাত ২:২৭)
  • ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com