সতর্ক করলেও পাত্তা দেননি বেলুন বিক্রেতা

রাজধানীর রূপনগর মণিপুর স্কুলের পাশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে বেলুন বিক্রেতাকে সতর্ক করেছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী। প্রথমে একটি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হতে দেখে ওই নারী বিক্রেতাকে সতর্ক করেন। কিন্তু বিক্রেতা বিষয়টি তেমন পাত্তা দেননি। বলেন, পানি দিলে ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে পরপর তিনটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলে চার শিশুর শরীর ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়। আহত হয়ে রক্তে লুটোপুটি খেতে থাকে অনেকেই। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাড়ে চারটার দিকে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়। সবমিলিয়ে মারা গেছে পাঁচজন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বরে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিহত শিশুরা হলো রমজান, মুকুল, শাহীন, ফারজানা। সবশেষ বিকালে নিহত শিশুটির নাম জানা যায়নি।  নিহত সবার বয়স ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে।

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন বেলুন বিক্রেতাও। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, বিস্ফোরণে তার হাত-পা পুড়ে গেছে। চোখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা গেছে। এই অবস্থাতেই তিনি পালিয়ে যান।

ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার মোহাম্মদ রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পাঁচজন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত আছেন বেশ কয়েকজন। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সেখানে আছে।’

নিহত সব শিশু বিক্রেতার কাছ থেকে বেলুন কিনছিল বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ মোস্তফা। ঘটনার সময় তিনি পাশের একটি চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা বেলুন কিনছিল তারা এখানেই থাকে। এখানেই খেলাধুলা করে। সবাই বস্তিরই বাচ্চা কাচ্চা। ভ্যানে তিনটি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বেলুন বিক্রি করা হচ্ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগে হঠাৎ সেটা বিস্ফোরিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অনেকের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় অনেককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

বিকট তিনটি শব্দ কানে আসে জানিয়ে মোস্তফা বলেন, ‘শুধু দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরাই আহত হয়নি। দূরে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন বা হেঁটে যাচ্ছিলেন তারাও আহত হয়েছেন। আশপাশে যেসব গাড়ি ছিল সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

বেরিয়ে দেখি রাস্তায় রক্ত আর মাংস পড়ে রয়েছে’

বিস্ফোরণের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সোহাগ নামের এক তরুণ। বলেন, ‘শব্দ শুনে যখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসি দেখি- বাচ্চারা ছিটে পড়ে রয়েছে। কেউ মরা, কেউ জীবিত, কেউ গোংড়াচ্ছে।’

সোহাগ বলেন, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ অনেক জোরে একটা শব্দ শুনে জেগে উঠি। ভাবছিলাম আমরা কারেন্টের চোরাই লাইন ব্যবহার করি। সেটার ট্রান্সমিটার বাস্ট হয়েছে। দেখি আমার ঘর কাঁপছে। পরে বাইরে আইস্যা দেখি রাস্তায় রক্ত আর মাংস ছিটিয়ে রয়েছে। চারদিকে ধোঁয়া আর ধোঁয়া।’

‘আমি নিজেই তিনজনকে উদ্ধার করে সুরক্ষা হাসপাতালে নিয়ে যাই। যারা মারা গেছে তারা সবাই বস্তির ছেলেপেলে। এরা তো একজন কেনে বাকিরা দাঁড়িয়ে দেখে।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (সকাল ১১:৪০)
  • ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com