করোনাভাইরাস: ইতালি যেন এক মৃত্যুপুরী

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছোবল দিয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ইতালিতে করোনায় ১০৭ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৯৯ জন।

দিন যতই গড়াচ্ছে দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার থেকে সব ধরনের স্কুল ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ইতালি সরকার। এছাড়া জনপ্রিয় সিরি এ-সহ সব ধরনের পেশাদার লিগ আগামী এক মাসের জন্য ইন্ডোরে খেলা হবে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টি এবং শিক্ষামন্ত্রী লুসিয়া আজ্জোলিনা এ ঘোষণা দেন। জিউসেপ্পে কন্টি বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

লুসিয়া আজ্জোলিনা তার টুইটারে বলেন, এই ‌‘বিচক্ষণ’ সিদ্ধান্তটি কোনো সাধারণ সিদ্ধান্ত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে স্কুল বন্ধ থাকবে। শুক্রবার থেকে অনলাইনের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হবে।

ইতালির নাগরিক সুরক্ষা বিভাগ বুধবার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশটির করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৯৯টি। মারা গেছেন ১০৭ জন এবং ২৭৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

দেশটির তিন হাজারের বেশি আক্রান্তের মধ্যে উত্তরাঞ্চলেই প্রাদুর্ভাব বেশি। দেশটির ২০ অঞ্চলের মধ্যে ১৯টিতেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে।

এদিকে চীনের বাইরে ইতালির পর সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইরানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৯২ জন। এছাড়া ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় ইরানের সব প্রদেশের রাজধানীতে জুমার নামাজ বাতিল করা হয়েছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। ইতোমধ্যে অন্তত ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৯৫ হাজার জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিন হাজার ২৫০ জন। আক্রান্ত ও নিহতদের অধিকাংশই চীনের। দেশটির মূল ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৯৮১ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৮০ হাজার ২৭০ জন।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। যার সমাধান স্বরুপ এখনো কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

নভেল করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাই আপাতত এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।

 

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন