নভেল করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯-এ চীনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। চীনের বাইরে ভাইরাসটির হটস্পট দেশের তালিকায় ইতালি শীর্ষে রয়েছে। ইউরোপের এই দেশটিতে গেল ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস ১৩৩ জন মারা গেছেন। সেই সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে ১৫৩২ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৭৫ এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালাম ৩৩৬ জনে।
গতকাল রোববার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬২২ জন। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির এক-চতুর্থাংশ মানুষকে কোয়ারান্টাইন বা বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ইউরোপীয় দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দেয়া লম্বার্ডি অঞ্চলের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলীয় ১৪টি প্রদেশের ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষকে রোববার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে সরকারের অনুমতি ছাড়া এসব মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করতে পারবে না।
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর ইউরোপে প্রথম সংক্রমিত হয় ইতালি। এরপর থেকে দেশটিতে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মরণঘাতী ভাইরাসটি মোকাবেলায় ইতালি সরকার চীনের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করল।
কোয়ারান্টাইনের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জিমনেশিয়াম, নাইট ক্লাবসহ জনসমাগম হয় এমন জায়গা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দিতে চাই। আমাদের নিজেদের কল্যাণে কখনো বড় বা ছোট আকারের এমন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়।
কোয়ারান্টাইনে বা চলাচলের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে মধ্য ও উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার ১৪টি প্রদেশের মোডেনা, পারমা, রিমিনি ও ভেনিস। এছাড়া লম্বার্ডি অঞ্চলের রাজধানী মিলানও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। কোয়ারান্টাইনের ফলে এসব প্রদেশের কেউ বিশেষ প্রয়োজনে সরকারের অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না। একইভাবে বাইরে থেকে কেউ এসব অঞ্চলে প্রবেশও করতে পারবে না। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর থাকতে পারে। এটি অমান্য করলে তিন মাসের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
ইতালীয় প্রধানমন্ত্রীও নতুন করে আরোপিত এ বিধিনিষেধ মেনে চলতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা জাতীয়ভাবে একটি জরুরি অবস্থার মুখোমুখি। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রোধে এবং হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমাতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এজন্য কোয়ারান্টাইন করা এলাকার মধ্যে নাগরিকদের চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি কাজ ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে উপযুক্ত প্রমাণ দেখিয়ে চলাচল করতে দেয়া হবে।
ইতালিতে নতুন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরো থাকছে বিয়ে বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মতো অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা। একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে যতটা সম্ভব ঘরে থাকা।