ইরাকের তিন ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র

ইরান ও বাগদাদের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে ইরাকের তিনটি সামরিক ঘাঁটি থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইরাকের আল-কাইম, কায়ারা ওয়েস্ট ও কিরকুকের ঘাঁটি থেকে তাদের সেনাদের সরিয়ে নিচ্ছে বলে মার্কিন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।

ইরাকের ৮টি ঘাঁটিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫ হাজার ২০০ সেনা অবস্থান করছে বলে ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহার ইরাকের মাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে আনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের।

ইরান ও ইরাকের বর্তমান সরকারের সঙ্গে তুমুল উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ঘাঁটি থেকে সরার এ সিদ্ধান্ত নিল।

চলতি সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আল-কাইম ঘাঁটি ও এর সামরিক সরঞ্জামগুলো ইরাকের সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করবে বলে জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইরাকের সিরীয় সীমান্ত অংশে মার্কিন সেনা উপস্থিতির অবসান ঘটবে।

ইউফ্রেতিস নদীর তীরের ছোট আল-কাইম শহরের কাছে পুরনো একটি রেলস্টেশনের ধ্বংসস্তূপের ওপর এ সামরিক ঘাঁটিটি গড়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ২০১৪ সালে এ এলাকাটি দিয়েই ইরাকে তাদের দখলযাত্রা শুরু করেছিল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইরাকি বাহিনী ফের তা পুনরুদ্ধার করে।

আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের পর মূলত ইরানসমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোই সীমান্তের সিরিয়া ও ইরাক দুই অংশেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

আল-কাইম ঘাঁটিতে ইরাকি সেনাবাহিনীর সদস্যরা থাকলেও ঘাঁটিটির আশপাশ এখন ইরানসমর্থিত পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সেসের (পিএমএফ) অধীনস্ত বাহিনীর কব্জায়। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এই ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ও যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর পাশাপাশি অবস্থান দুই পক্ষের জন্যই বিব্রতকর ছিল, কিন্তু ইরাকি বাহিনী সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করায় সে সময় বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি।

আইএস বিতাড়নের পর পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। ইরানসমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর অংশ হিসেবে ক্ষমতাকাঠামোতেও নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করে নেয়।

আল-কাইম ঘাঁটি মার্কিন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর বাইরের সড়ক ও স্থাপনাগুলোতে দেখা যেতো পিএমএফের পতাকা, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির ছবিসম্বলিত বিলবোর্ড। পিএমএফ নিয়ন্ত্রিত এসব সড়ক পেরিয়েই ঘাঁটিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের সিরিয়ার সীমান্তে যেতে হতো।

আইএসের বিদায়ের পর থেকেই ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অবস্থানের কঠোর বিরোধিতা শুরু করে।

পিএমএফের অধীনে থাকা কাতাইব হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সিরিয়া সীমান্তের কাছে তাদের ঘাঁটিগুলোতে ধারাবাহিক হামলা চালানোর অভিযোগ করে; পেন্টাগন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

জানুয়ারিতে বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেমানি ও পিএমএফের ডেপুটি কমান্ডার আবু মাহদি আল-মুহান্দিস নিহত হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। বাগদাদে পিএমএফ সদরদপ্তরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাতাইব হিজবুল্লাহর এক কমান্ডার আবু আমেনেহ বলেন, ‘তারা যদি যেতে নাও চায়, আমরা তাদের বাধ্য করবো।’

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, আইএসের হুমকির মাত্রা কমে আসায় গত বছরের শেষ থেকেই তারা আল-কাইম ঘাঁটি থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সোলেমানির মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও জোট বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা ভাবনা ওই পরিকল্পনাকে গতি দেয়।

কাতাইব হিজবুল্লাহর হুমকিই সেনাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

অন্য যে দুটি ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য প্রত্যাহারের চিন্তা করছে, সেই কায়ারা ওয়েস্ট ও কিরকুকের দুটি ঘাঁটিতেই সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ধারাবাহিক রকেট হামলা হচ্ছে। আইএসের হাত থেকে মসুল পুনরুদ্ধার অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা কায়ারা ওয়েস্ট ঘাঁটিটিকে ব্যবহার করেছিল।

ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর রকেট হামলা এবং এর পাল্টায় তাদের স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনায় দুই পক্ষকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে ইরাকি জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড। ইরাকে সব সামরিক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ এ কমান্ডের হাতেই থাকে বলে জানিয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিলেও এ সৈন্যদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হবে নাকি অন্য ঘাঁটিগুলোতে স্থানান্তর করা হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

 

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন