টানা বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা তালিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। এ অবস্থায় নগরের নিচু এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে লোডশেডিং। ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা যাওয়া খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (৬ আগস্ট) নগরের বিভিন্ন এলাকায় সারাদিন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। কোনো কোনো এলাকায় দিনভর বিদ্যুৎ ছিল না।
যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিভিন্ন এলাকায় গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ লাইনে পড়েছে। কোথাও কোথাও ট্রান্সফরমারের ওপর পড়েছে। এছাড়া পাহাড় ধসসহ নানা কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে করে পানিবন্দি চট্টগ্রামবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঙ্কটেও বসে নেই তারা। সঞ্চালন লাইন মেরামতের চেষ্টা চলছে। তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না।
গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে নগরের বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, ষোলশহর ও ২ নম্বর গেট এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার নিচু বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লোকজন। দিনভর একই অবস্থায় থাকায় দৈনন্দিন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারেননি অনেকে। যারা বের হয়েছেন তারাও পড়েছেন ভোগান্তিতে।
নগরের বাকলিয়া থানা এলাকায় বসবাসরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। এখন রাত হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ আসার নাম নেই।
চকবাজার এলাকার চশমার দোকানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আজকে সকাল থেকে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। দীর্ঘক্ষণ পর কিছুক্ষণ আগে বিদ্যুৎ এসেছে। বিভিন্ন সড়কে পানি থাকায় ক্রেতা একেবারেই কম ছিল। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় চশমা ফিটিংয়ের কাজ করা যায়নি।এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছে। অন্য কোনো সমস্যা নেই। টানা বৃষ্টিপাতে কোথাও বিদ্যুৎ লাইনে আবার কোথাও ট্রান্সফরমারে গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আমাদের কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি ধর ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে সন্ধ্যা ৬টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া আমবাগানে ২১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ রকম ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলা হয়েছে। বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ৮০০ পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করেছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক জানান, নগরের আকবরশাহ এলাকার বিজয় নগর, ঝিল-১,২,৩ – শান্তিনগর, বেলতলীঘোনা এলাকা থেকে রোববার ৫০০ পরিবারকে সরানো হয়েছে। এছাড়া মতিঝর্ণা থেকে ৩০০ জন সরানো হয়েছে। তাদের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার দেওয়া হচ্ছে।