কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের নেতারা বলেছেন, মিয়ানমারের নৃশংসতার যে প্রমাণ তারা দিয়েছেন তার ভিত্তিতে গোটা বিশ্ব এ ঘটনার বিচার করবে।
বুধবার আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দোষী বলতে অস্বীকার করায় তারা এসব কথা বলেন।
সুচি সেখানে বলেছিলেন, বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ লিপ্ত হওয়ায় দুর্ভাগ্যবশত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে সাধারণ যে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল সেই অভিযোগও সুচি ওই আদালতে অস্বীকার করেন।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা জাতিকে নির্মূল করার উদ্দেশ্য থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যার অভিযান চালিয়েছিল। এতে ৭ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গা নেতা, মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ সুচির ব্কব্যের প্রতিবাদে বলেছেন, ‘ তারা যে গণহত্যা করেনি গোটা বিশ্ব প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিচার করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ চোর কখনও বলবে না সে চুরি করেছে। কিন্তু সে যে অপরাধ করে সাক্ষ্যের মাধ্যমে তা প্রমাণ হয়।’
তার মতে, মিয়ানমারে যে গণহত্যা হয়েছে গোটা বিশ্বও সেটার প্রমাণ পেয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ যদি সুচি মিথ্যা বলেন তাহলে তিনিও রেহাই পাবেন না। তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ বিশ্বের উচিত সুচির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া।’
কুতুপালং শিবিরের আরেক শরণার্থী নূর কামালও সুচির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কামাল বলেন, ‘সেনা সদস্যরা লোকজনকে ঘিরে রেখেছে এবং গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে,বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে – এটি কি গণহত্যা নয়?সুচি যা বলেছে তাই মেনে নিতে হবে?’ কামাল আরও বলেন, ‘বিশ্ব এটা মানবে না। পুরো বিশ্ব আমাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা দেখেছিল, যা এখনও চলছে।’
এদিকে গাম্বিয়ার আইনি দল, হেগের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মিয়ানমারে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল এবং এখসও চলছে সে বিষয়ে অভিযোগ তুলেছে।
সুচি অবশ্য গাম্বিয়ার ওই আইনি দলের অভিযোগ বিভ্রান্তিমূলক এবং অসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন।
যে সামরিক বাহিনী সুচিকে ১৫ বছর গৃহবন্দী করে রেখেছিল তাদের রক্ষা করতে সুচির এ অবস্থান অনেককেই অবাক করেছে।
উল্লেখ্য, সামরিকতন্ত্রের বিপক্ষে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে সুচি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় সুচি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার আহবান দাবি ওঠে গোটা বিশ্ব থেকে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান