কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্বরোচিত হামলার দায় নিল ইসলামিক স্টেট (আইএসের)। সোমবার (২ নভেম্বর, ২০২০) রাতে এক টেলিগ্রাম বার্তায় এই ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইএস। তারা দাবি করে, হতাহতদের মধ্যে বিচারক, তদন্তকারী ও নিরাপত্তা আধিকারিকেরা রয়েছেন। সোমবার কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে ২২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রথমে তালিবানদের সন্দেহ করা হলেও তারা এই হামলার দায় নিতে অস্বীকার করে। তার পরেই আইএসকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বিবৃতি দিয়ে তারা এই দায় নেয়।
আজ, মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) গোটা দেশে শোকদিবস পালন করা হবে। সোমবারই আফগান সরকার ৩ নভেম্বর দিনটিকে রাষ্ট্রীয় শোকদিবস হিসেবে ঘোষণা করে। গোটা দেশে সর্বত্র আফগান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে আফগান কূটনৈতিক মিশনগুলিতে শোকপ্রকাশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
কড়া ভাষায় সন্ত্রাস ও নৃশংসতার নিন্দা করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। জঙ্গিদের উদ্দেশে গনি দৃঢ় চিত্তে বলেন, ‘এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলার প্রতিশোধ আমরা নেবই। আজ নিরীহ পড়ুয়াদের রক্ত ঝরেছে। আমাদের বীর প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা বাহিনী তোমাদের ধাওয়া করবে। যে কোনাতেই তোমরা লোকানোর চেষ্টা করো, খুঁজে বের করে নিকেশ করবে।’ আফগান প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘এদিনের হামলা আমাদের শোকে জর্জরিত করেছে।’
আফগানিস্তানের রাজধানীতে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থার খবরে দাবি করা হয়েছে।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে হামলায় ২২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেশির ভাগই পড়ুয়া। কাবুল পুলিশের এক মুখপাত্র সংবাদ সংস্থাকে জানান, হামলায় নিহতদের সকলেই শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১০ জন মহিলা।
হামলায় বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ এই হামলা হয়। হামলাকারীদের একজন ক্যাম্পাসে ঢুকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। এর পরই দু’জন বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি চালায়। সে সময় পড়ুয়াদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে দেওয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন।’
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এদিন ইরানি বই মেলা উদ্বোধনের আগের মুহূর্তে এই হামলা চালানো হয়েছে। আফগান সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বইমেলা উপলক্ষে ইরানের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও আরও কয়েক জন অতিথি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁদের কেউ হতাহত হয়নি। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, কয়েক ঘণ্টার গুলির লড়াইয়ের পর বন্দুকবাজেরা নিহত হয়েছে। ক্যাম্পাসে আর কোনও হামলাকারী নেই বলে জানিয়েছে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের সঙ্গে ছিল মার্কিন সেনাও।
দু’সপ্তাহের কম সময়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে এটি দ্বিতীয় হামলা। গত ২৪ অক্টোবর কাবুলের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ১০০ জন। অক্টোবর শেষের এই হামলারও দায় নিয়েছিল আইএস।