ইসলামে যে ৪ মাস বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন

আরবি চন্দ্র বছরের ১২ মাসের মধ্যে চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআন শরীফে বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান’। (সুরা তাওবাহ, আয়াত ৩৬)।

এই ৪ মাস হলো- জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আবার এই ৪ মাসের মধ্যে অন্যতম ‘জিলহজ’ মাস। কারণ জিলহজ মাস হজের মাস। হজের তিনটি মাস শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। এর মধ্যে প্রধান হলো জিলহজ।

কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হজ সম্পাদন সুবিদিত মাসসমূহে। অতঃপর যে কেউ এই মাসগুলোয় হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রীসম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহবিবাদ বিধেয় নহে। তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা করবে, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, তোমরা আমাকে ভয় করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৭)।

‘জিলকদ’ মাসে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইবাদত ও আমল না থাকলেও আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত মর্যাদার ৪ মাসের একটি। আল্লাহ তাআলা এ মাসে যে কোনো রক্তপাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ বা বাদানুবাদকে হারাম করেছেন। মুসলিম উম্মাহ মাসটি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করবে। হজ, কোরবানি ও জিলহজের রোজার প্রস্তুতিতে বিশ্রাম নেবে। এটিও ইবাদতের অন্তর্গত।

লিসানুল আরব ও ইবনে মানজুর-এর তথ্য মতে, তৎকালীন যুগে জিলকদ মাসে আরবের লোকেরা বাণিজ্য থেকে ফিরে আসতো, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসতো এবং বিশ্রাম গ্রহণ করতো। তাছাড়া ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজও থাকতো না।

হিজরি বছরের প্রথম মাস ‘মহররম’। হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবনায় মহররম মাসকে হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। মহররম মাসের ১০ম দিনকে ‘আশুরা’ বলা হয়। এ দিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর জাতিকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে ইসলামের আগমনের আগে থেকেই ইয়াহুদিরাও রোজা রাখতেন।

আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)

আরবি চন্দ্র বছরের সপ্তম মাস ‘রজব’। এ মাসের মর্যাদা উপলব্ধি করতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা অন্তরের) জমিন চাষাবাদ করল না আর শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে মনের) জমিন আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে রোজা রাখতেন এবং বেশি বেশি বরকত পেতে দোয়া করতেন; উম্মতকেও দোয়া করতে বলতেন-
اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! রজব শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান মাস আমাদের নসিব করুন।’ (বুখারি মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চারটি মাসের ফজিলত, মর্যাদা ও আমলের প্রতি গুরুত্বারোপ করার তাওফিক দান করুন। এই মাসসমূহে বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • শুক্রবার (দুপুর ১২:২৩)
  • ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com