বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করবে তরুণ প্রজন্ম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি বিশ্বের দিকে তাকিয়ে আছি যেখানে মানবতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম। পৃথিবীর সব সম্পদ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে এমন কল্যাণের দ্বার উন্মোচিত হবে, যেখানে প্রতিটি মানুষের সুখী ও সম্মানজনক জীবনের ন্যূনতম নিশ্চয়তা থাকবে।’ তার স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে। দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন সর্বজনীন এবং সবারই আয়ত্তের মধ্যে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি প্রচেষ্টা ব্যাপক মাত্রায় বাস্তবায়িত হয়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ হলো বাংলাদেশে ডিজিটাল ক্ষমতার প্রসার ঘটেছে। বিশ্বের যে কটি দেশ অর্থনৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে ডিজিটাল রূপান্তর প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী, বাংলাদেশ তাদের কাছে একটি রোল মডেল হয়ে থাকবে। এই রূপান্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেবা, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নকে নতুন পথে চালিত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের তরুণদের রয়েছে দুটি বিশেষ শক্তি- আস্থা, ক্ষমতা ও দক্ষতার মাত্রা। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে এই আস্থা, বিশ্বাস নিয়েই আমরা প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে সক্ষম। এজন্য সারা বিশ্বই আজ তাকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত শক্তি ও প্রচেষ্টার দিকে।

সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য নিরলস কাজ করছে। শিক্ষা, কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। করোনা অতিমারীর সংকটকালীন মুহূর্তেও ঘরে বসেই অনলাইনে নাগরিকরা প্রায় সব ধরনের সেবা পেয়েছেন, যা ডিজিটাল বাংলাদেশরই সুফল। দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে- শিক্ষা, অফিস-আদালত, ব্যাংক, সভা-সেমিনার, কনফারেন্স ইত্যাদি অনলাইনভিত্তিক করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা ঘরে বসেই করতে পেরেছেন। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার কারণে সব ধরনের বিল ও আর্থিক লেনদেন ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে করা যাচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, দেশের সবকিছু উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা, যাকে এক কথায় ডিজিটালাইজেশন বলা হয়ে থাকে। এটি বিশেষ ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টা। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। এক সময় আমাদের দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেক দেশেই কম ছিল। সেই পাসপোর্ট যখন সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে রূপান্তর করা হলো তখন এর গ্রহণযোগ্যতাও অনেক গুণ বেড়ে যায়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স-এর শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬তম। বর্তমানে দেশ ডিজিটাল বিপ্লবের পরের অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে। অ-ডিজিটাল ক্ষেত্রগুলোতে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রভাব এখন অনস্বীকার্য। ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উন্নত হতে হবে এবং সেই উদ্যোগ সফল করতে স্মার্ট বাংলাদেশ এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী এক কর্মপরিকল্পনা। ইতোমধ্যে ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ প্রয়োজনীয় সেবা কম সময়ে, কম খরচে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ৯০ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর আইসিটি খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে। গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছে আওয়ামী লীগ আওয়ামী। এবারের ইশতেহারের স্লোগান-‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক বড় হবে নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে। দাপ্তরিক কাজে কাগজের ব্যবহার কমে যাবে। সব লেনদেন হবে ক্যাশলেস। আশা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস হবে। সমাজের ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমবে। শতভাগ মানুষ ইন্টারনেটে যুক্ত থাকবে। জানা গেছে, শিক্ষা, কৃষি, বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্যসহ ৪০টি উদ্যোগ নির্বাচন করেছে সরকার। এই মুহূর্তে ১৯ কোটি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট এবং ১৬ লাখ এজেন্টের মাধ্যমে মানুষ সেবা পাচ্ছে। ১৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভ্রমণে ভোগান্তি দূর করতে ই-টিকেট চালু হয়েছে। বিচারিক ব্যবস্থাকে সহজ করতে চালু হয়েছে অনলাইন কজলিস্ট, জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) অ্যাপ। ভার্চুয়াল কোর্ট করোনাকালীন চালু করা হয়। থানায় সাধারণ ডায়েরি, মামলা ফাইলিং ডিজিটাল হয়েছে। জরুরি সেবায় জনগণের পাশে আছে ৯৯৯। ভূমি সেবায় বিপুল পরিবর্তন এসেছে। ভূমিবিষয়ক জরুরি সেবা প্রদানে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ এবং ১৬১২২ একত্রে কাজ করেছে। ৩৩৩-২ নম্ব^রে ফোন করে ঘরে বসেই ডাকযোগে খতিয়ান (পর্চা) ও জমির ম্যাপ প্রাপ্তি, নামজারি ফি এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বেড়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তায় আনা সম্ভব হয়েছে। ই-টেন্ডারিং চালু রয়েছে।

২০২১ থেকে ২০৪১ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন শুরু হয়ে গেছে, অর্থাৎ ’২১ থেকে ’৪১ পর্যন্ত সময়ে কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে, তার একটা কাঠামো পরিকল্পনা বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই প্রণয়ন করে ফেলেছে, যা জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। অন্যদিকে ২০৪১ সালেই শেষ নয়, ২১০০ সালেও এ বঙ্গীয় ব-দ্বীপ যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয়, দেশের মানুষ যাতে ‘সুন্দর, সুস্থ ও স্মার্টলি’ বাঁচতে পারে, সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৪১ সালের লক্ষ্য স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম। উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অত্যাধুনিক পাওয়ার গ্রিড, গ্রিন ইকোনমি, দক্ষতা উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং নগর উন্নয়নে কাজ করছে।

বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপাদান তরুণ প্রজন্ম। প্রযুক্তিগত ক্ষমতায়নের মাধ্যমে শেখ হাসিনার রূপকল্প ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট সরকার ও নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ‘স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমি’ স্থাপন করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সঙ্গে যৌথভাবে স্থাপন করা হয়েছে ‘সেন্টার ফর ফোথ ইন্ডাট্রিয়াল রেভুলেশন’। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রসহ মোট ১০০টি উদ্ভাবনী আইসিটি পণ্য আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাজারে আসবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আইসিটি রপ্তানি ও ৩০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সংসদ সদস্যদের তিনটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে- নীতি কৌশল আইন প্রণয়ন, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা এবং জনপ্রতিনিধি ও ১৭ কোটি মানুষের ভয়েস হিসেবে জাতীয় সংসদে অবদান রাখা।

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তর এক বিশাল কর্মযজ্ঞ- পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, দক্ষ লোকবল, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছা থাকতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তি, প্রযুক্তিগত ক্ষমতার প্রসার এবং শিল্পোদ্যোগ প্রচেষ্টা জোরদার হবে।

বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপাদান তরুণ প্রজন্ম। প্রযুক্তিগত ক্ষমতায়নের মাধ্যমে শেখ হাসিনার রূপকল্প ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট সরকার ও নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ‘স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমি’ স্থাপন করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সঙ্গে যৌথভাবে স্থাপন করা হয়েছে ‘সেন্টার ফর ফোথ ইন্ডাট্রিয়াল রেভুলেশন’। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রসহ মোট ১০০টি উদ্ভাবনী আইসিটি পণ্য আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাজারে আসবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আইসিটি রপ্তানি ও ৩০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সংসদ সদস্যদের তিনটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে- নীতি কৌশল আইন প্রণয়ন, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা এবং জনপ্রতিনিধি ও ১৭ কোটি মানুষের ভয়েস হিসেবে জাতীয় সংসদে অবদান রাখা।

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তর এক বিশাল কর্মযজ্ঞ- পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, দক্ষ লোকবল, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছা থাকতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। আমাদের বিশ^াস, স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তি, প্রযুক্তিগত ক্ষমতার প্রসার এবং শিল্পোদ্যোগ প্রচেষ্টা জোরদার হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আজকের দিন-তারিখ
  • বুধবার (সন্ধ্যা ৬:৪০)
  • ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com